ছাদ কৃষির কিছু ঝুকি
ছাদ কৃষি খুব ভালো একটা কাজ এর সুবিধা ও অনেক বেশি। কিন্তু প্রতিটা জিনিসের কিছু ভালো খারাপ থাকে আজ আমরা তেমনি কিছু ছাদ কৃষির অসুবিধা সর্ম্পকে জানবো।
ছাদ কৃষি খুব ভালো একটা কাজ এর সুবিধা ও অনেক বেশি। কিন্তু প্রতিটা জিনিসের কিছু ভালো খারাপ থাকে আজ আমরা তেমনি কিছু ছাদ কৃষির অসুবিধা সর্ম্পকে জানবো।
ছাদ কৃষির কিছু অসুবিধাঃ
১.কাঠামোগত দুর্বলতা:
ছাদকৃষির কারণে ছাদে যেসব বাড়তি ভার সংযোজন করা হয়, যেমন চাষের মাটি, কম্পোস্ট, গাছ, ঝোপ, ফুল, সবজির বেড, ফলের গাছ এবং বাগানের সবজি, ফল ইত্যাদির জন্য তৈরি অস্থায়ী কাঠ, বাঁশ ও ইস্পাত কাঠামো থেকে, যেগুলো এসব ভবনে স্থাপিত করা হয়। এ ছাড়া বাগানের জন্য কংক্রিটের বক্স, জালের জন্য অস্থায়ী স্থাপনা, সবজি চাষের জন্য পোস্ট ও ফ্রেমের স্থাপন এবং মাছের চাষ ও হাঁস-মুরগি পালনের জন্য অন্যান্য স্থাপনাও সংযোজন করা হয়। যখন অতিরিক্ত ভার একটি ভবনে স্থাপন করা হয়, যা ভবনের নকশায় ছিল না, তখন ভবনটির ভার ধারণক্ষমতার চাইতে বেশি হতে পারে, যার কারণে মানবসৃষ্ট দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এটির কারণে ছাদ ধস, ভবনের স্থাপনা এবং ফাউন্ডেশন ধস নামতে পারে। এর কারণে ভবনের সামগ্রিক কাঠামোতে ধসের ফলে ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়তে পারে। পাশাপাশি প্রতিবেশী ভবনগুলোও গুরুতর হুমকির মুখে পড়তে পারে। বিদ্যমান ভবনগুলো অতিরিক্ত ভার বহনের জন্য ডিজাইন করা হয়নি। কারণ বিএনবিসিতে এই ধরনের অতিরিক্ত ভার বহন নিয়ে কোনো বিধান নেই, যা নকশা পেশাদারের মাধ্যমে বিবেচিত হয়।
২.ওয়াসার সরবরাহ করা পানি এবং বর্জ্যমিশ্রিত পানি নিষ্কাশনের ওপর প্রভাব:
ছাদকৃষিতে সরবরাহ করা অতিরিক্ত পানি এবং নিষ্কাশিত বর্জ্যমিশ্রিত পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা অবকাঠামো তৈরির আগেই গুরুত্ব সহকারে মূল্যায়ন করতে হবে। ঢাকায় পানি সরবরাহ, নিষ্কাশন ও স্যানিটেশন/স্বাস্থ্যব্যবস্থা পরিচালনা করার প্রধান সংস্থা হচ্ছে ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যুয়ারেজ অথোরিটি বা ওয়াসা। ছাদকৃষিতে ব্যবহৃত অতিরিক্ত পানি অন্য কোনো বিকল্প সরবরাহ মাধ্যম না পাওয়া পর্যন্ত ওয়াসার থেকে সরবরাহ করতে হবে। এটি ওয়াসার পানির ওপর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অতিরিক্ত চাহিদা সৃষ্টি করবে, যার ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমান্বয়ে নিচে নেমে যাবে এবং এর ফলে নির্বিশেষে সব বাসিন্দার জন্য পানির দাম বেড়ে যাবে। এটি ঢাকার নিম্ন, মধ্যম ও অন্যান্য সীমিত আয়ের জনসংখ্যার ওপর বহুলাংশে প্রভাব ফেলবে। অর্থনৈতিকভাবে তাঁরা এই ছাদকৃষির সুবিধাভোগী না হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের এই অতিরিক্ত প্রতি গ্যালন পানির খরচ বহন করতে হবে। উপরন্তু, ছাদ থেকে বর্জ্যমিশ্রিত পানি ছাদের পানি নিষ্কাশন পথের মাধ্যমে বের হয়ে যাবে, যেটা বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য তৈরি, বর্জ্যমিশ্রিত পানির জন্য নয়। এই বর্জ্যমিশ্রিত পানির সঙ্গে কীটনাশক (স্প্রে থেকে পাওয়া), সারযুক্ত মাটি, এবং হাঁস-মুরগির বর্জ্য, মাছের বর্জ্যমিশ্রিত দূষিত পানি বহন করে আনে। এই বর্জ্যসহ নিষ্কাশিত পানি প্রথমে রাস্তায় পড়ছে এবং পরে হয়তো ওয়াসার নর্দমা দিয়ে চলে যাচ্ছে। রাস্তায় পড়া এই বিষাক্ত বর্জ্যমিশ্রিত পানি ঢাকাবাসীর জন্য বিভিন্ন অসুখের পাশাপাশি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি করবে।
৩. ‘গ্রিন এনার্জির’ প্রয়োজনীয়তার ওপর প্রভাব:
‘গ্রিন এনার্জির’ আওতায় সরকারি নির্দেশনায় বহুতল ভবনের ছাদে সৌর প্যানেল স্থাপিত করা হয়েছে। ছাদকৃষি এসব সৌর প্যানেলের ওপর প্রভাব ফেলবে এবং ছাদকৃষির ফলে ছাদের সৌর প্যানেল ব্যবহার ক্রমান্বয়ে সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে। যদি কোনো বহুতল ভবনের মাত্র একটি সাধারণ ছাদ থাকে, এবং সেটি যদি ছাদকৃষির জন্য ব্যবহৃত হয়, তাহলে এটির অন্যান্য ব্যবহার এবং বিনোদনমূলক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা কঠিন হয়ে যাবে।
৪.পরিবেশের ওপর প্রভাব:
যদিও ছাদকৃষি অনেক কৃষি সামগ্রী সরবরাহ করবে, তবে খামার ও মাছ চাষ প্রতিবেশী ভবনের বাসিন্দাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করবে। শাকসবজি, গাছপালা, পশুপাখি ও মাছ রোগজীবাণু বহন করবে। ঢাকা শহরের মতো একটি ঘনবসতিপূর্ণ আটকা এলাকায় রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। জৈব ও অন্যান্য সারের ব্যবহার, পাখির বিষ্ঠা এবং মাছের বর্জ্য ঘনবসতিপূর্ণ আটকা এলাকা, যেখানে প্রাকৃতিক বায়ুর সঞ্চালন সীমাবদ্ধ, সেখানকার আশপাশের জনবসতির জন্য স্বাস্থ্যকর নয়। অ্যামোনিয়ার মতো গ্যাস এবং চাষাবাদে ব্যবহৃত অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্য যেমন পোকামাকড় বিতাড়ক ও কীটনাশক মানুষের জন্য ক্ষতিকর, বিশেষ করে দৈনন্দিন জীবনে যাঁরা এর রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত। এটি শহরের জীবনযাত্রা এবং বেঁচে থাকার সুষ্ঠু পরিবেশের ওপর নেতিবাচক ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলবে।
৫.ঘূর্ণিঝড় এবং তীব্র বাতাসের সময় প্রভাব:
বাংলাদেশ একটি গ্রীষ্মপ্রধান দেশ এবং ঘূর্ণিঝড় ও তীব্র বাতাস এ দেশের জন্য খুবই সাধারণ বিষয়। প্রাথমিকভাবে ঋতুভিত্তিক সবজি ও ফুল ছাদ ও বারান্দায় চাষ করা হয়। কিন্তু ছাদকৃষিতে বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছ যেগুলো ২০-৩০ ফুটের মতো লম্বা এবং প্রশস্ত ঝোপের মতো হয় বর্ধিত হয়, যেমন: আম, কলা, লিচু ইত্যাদি। অনেক মালিক ওই ধরনের গাছ লাগানোর জন্য কংক্রিটের পরিবেষ্টন তৈরি করেন, যা কয়েক ফুট উঁচু হয় এবং মাটি, গোবর, সার ও কম্পোস্ট দিয়ে পূর্ণ থাকে।এর পাশাপাশি অনেক মালিক ছাদের ওপর পশুর খামার ও জলীয় কৃষি আরম্ভ করেছেন, যার জন্য ছাদে মাছ এবং পানির ট্যাংক অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এগুলো যেকোনো ভবনের কাঠামো ও ভিত্তির জন্য উল্লেখযোগ্য অতিরিক্ত ভার। এই ফলের গাছগুলোর মধ্যে কিছু গাছকে মাটির অনেক গভীর পর্যন্ত শিকড় বিস্তৃত করার প্রয়োজন হয় অবাধে দাঁড়ানো এবং ঘূর্ণিঝড় ও প্রবল বাতাসের সময় পড়ে যাওয়া প্রতিরোধ করার জন্য। কিন্তু এই ফলগাছের জন্য তৈরি ছাদের এই অগভীর মাটির বেডগুলো প্রবল বাতাসের সময় গাছগুলোকে নিজ স্থানে আটকে না-ও রাখতে পারে। এর ফলস্বরূপ গাছগুলো উপড়ে পড়ে ভবনের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবেশী ভবনের ধ্বংস হতে পারে, পড়তে পারে বৈদ্যুতিক তার ও অন্যান্য তার, কাছাকাছি যানবাহন ও পথচারীর ওপর এবং ঘটতে পারে সম্পদ নাশসহ প্রাণহানির মতো ঘটনা। এই একই ঘটনা ঘটতে পারে ছাদ কৃষিতে ব্যবহৃত অস্থায়ী বাঁশের ধারক, জাল, সংযোজিত অতিরিক্ত সহায়ক, পাত্র এবং অন্যান্য অনিরাপদ সরঞ্জামের জন্য।
৬. কৃষকদের ওপর আর্থিক প্রভাব এবং পরিণতি:
ছাদকৃষি গ্রামের কৃষকদেরও প্রভাবিত করছে। বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে পরিচিত। উৎপাদিত বেশির ভাগ পণ্যই বিশেষ করে মৌসুমি সবজি ও বছরব্যাপী ফল এসব গ্রাম থেকেই আসে। অনেকের জন্য, এই মৌসুমি সবজি প্রধানত দুটি বার্ষিক ফসলের মধ্যবর্তী স্বল্প সময়ে চাষাবাদ করা হয়, যা কৃষকদের বেঁচে থাকার জন্য অতিরিক্ত আয়ের উৎস। সাধারণত সচ্ছল আয়ের পরিবারের সদস্যরাই এই পণ্যগুলোর ভোক্তা। এই সচ্ছল আয়ের পরিবারের মধ্যে যাঁরা বহুতল ভবনের মালিক, তাঁরা নিজস্ব ছাদে চাষ করছেন ঋতুভিত্তিক সবজি, ফুল ও ফলের বাগান। কারণ তারা ছাদকৃষিতে প্রয়োজনীয় অর্থ জোগান দিতে সক্ষম। যদি তারা এখন ‘নাগরিক ছাদ কৃষক’ হয়ে ওঠেন, তাহলে তাঁরা আর বাজার থেকে এই উৎপাদিত মৌসুমি পণ্য আর কিনবেন না। এটি বাণিজ্যিকভাবে ঢাকা এবং অন্যান্য শহরে উৎপাদিত হতে থাকলে সবজির কৃষি বাজার সংকুচিত করবে, ফলে উৎপাদন কমে যাবে, বিক্রয়মূল্য বেড়ে যাবে এবং সীমিত আয়, মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত মানুষের আয়ের পরিবারের ওপর বাড়তি আর্থিক চাপ সৃষ্টি করবে। এর কারণে গ্রাম এবং গ্রামীণ কৃষকেরা সবজি উৎপাদনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে, যাঁদের অনেকেই তাঁদের জীবিকা নির্বাহের জন্য কৃষির ওপর নির্ভরশীল, ফলে তাঁদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে। এর ফলে কৃষিভিত্তিক একটি বিশাল শ্রমিক সম্প্রদায় কর্মহীন হয়ে যেতে পারে এবং তৈরি হবে সামাজিক আর্থিক ভারসাম্যহীনতা, যার প্রভাব পড়বে ঢাকার বাজার এবং উৎপাদকদের ওপর। এই পেশার সঙ্গে জড়িত তরুণ কর্মক্ষম যুবক যাঁরা এই ব্যবসার উৎপাদক থেকে শেষ ব্যবহারকারী, তাঁরা এর ফলে প্রবলভাবে প্রভাবিত হবেন এবং হতাশার কারণে সামাজিক অবক্ষয় হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থেকে সরে আসবেন।
ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত
Thank you for reading!