শীতের সবজির উপকারিতা
শীতের শাক-সবজি পুষ্টিগুণে ভরপুর। আমাদের শরীরে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন কিংবা ফ্যাট এর পাশাপাশি মিনারেলস এবং ভিটামিন এর ভূমিকা অন্যতম। শরীরের প্রয়োজনীয় যাবতীয় ভিটামিন ও মিনারেলস রয়েছে শীতকালীন সতেজ শাক-সবজিতে। তাই শরীরকে ফিট রাখতে হলে নিয়মিত শাক-সবজি খেতে হবে।
হিম হিম ঠান্ডা, কুয়াশা ঢাকা সকাল, নিজেকে চাদরে মুড়িযে সদ্য আনা এক গ্লাস খেজুরের রস খাওয়া, দাওয়ায় বসে আগুনের ওম নেয়া — এ যেন চিরায়িত শীতকাল। শীতকালে গ্রামে গন্জে সবজি ক্ষেতে ভরপুর, আর শহরের বাজারে থাকে নানা রংয়ের সবজির মেলা।
শীতের শাক-সবজি পুষ্টিগুণে ভরপুর। আমাদের শরীরে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন কিংবা ফ্যাট এর পাশাপাশি মিনারেলস এবং ভিটামিন এর ভূমিকা অন্যতম। শরীরের প্রয়োজনীয় যাবতীয় ভিটামিন ও মিনারেলস রয়েছে শীতকালীন সতেজ শাক-সবজিতে। তাই শরীরকে ফিট রাখতে হলে নিয়মিত শাক-সবজি খেতে হবে। শীতের শাক-সবজির মধ্যে অন্যতম হল — ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, গাজর, টমেটো, ব্রোকলি, পালংশাক, মটরশুটি, মুলা, ধনেপাতা, ইত্যাদি। প্রতিটা সবজির পুস্টিগুন আলাদা ভাবে জেনে নিই। এতে করে নিজের শরীরের পুষ্টি চাহিদা অনুসারে সবজি বাছাই করতে সুবিধা হয়।
১। ফুলকপি :
শীতকালে অন্যতম ও সুস্বাদু একটা সবজি। ফুলকপিতে আছে ভিটামিন এ, বি, ও সি। আরও আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম ও সালফার।
* গর্ভবতী মা, বাড়ন্ত শিশু এবং যারা অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করে তাদের জন্য ফুলকপি বেশ উপকারী একটা সবজি।
* ফুলকপিতে কোনো চর্বির মাত্রা নেই। তাই রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রন থাকে।
* ফুলকপি পাকস্থলির ক্যান্সার প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
* শীতকালীন বিভিন্ন রোগ যেমন জ্বর, কাশি, সর্দি প্রতিরোধ করে।
* ফুলকপিতে পর্যাপ্ত পরিমান ফাইবার আছে যা ওজন নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।
২। বাঁধাকপি :
বাঁধাকপিতে শর্করা, ভিটামিন সি ও ই, মিনারেল, এমাইনো এসিড এবং প্রচুর পানি আছে।
* বাঁধাকপিতে উপস্থিত ভিটামিন সি আমাদের শরীরের হাড়কে শক্ত ও মজবুত রাখে।
* ওজন কমাতে সহায়ক খাবার বাঁধাকপি।
* আমাদের শরীরের পাকস্থলির আলসার প্রতিরোধে বাঁধাকপির জুড়ি নেই।
* বাঁধাকপি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।
* বাঁধাকপিতে আছে প্রচুর ভিটামিন ই, যা ত্বকের যে কোনো সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম।
৩। শিম :
শিম সুস্বাদু, পুষ্টিকর, আমিষের একটি ভালো উৎস। এটি প্রধানত সবজি হিসেবে এবং এর শুকনো বীজ ডাল হিসেবে খাওয়া হয়।
* শিমের আঁশ-জাতীয় অংশ খাবার পরিপাকে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
* রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়।
৩। গাজর :
গাজর অত্যন্ত পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও খাদ্যআঁশ সমৃদ্ধ শীতকালীন সবজি, যা এখন প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। তরকারি বা সালাদ হিসেবে এই সবজি খাওয়া যায়।
* গাজরে আছে বিটা ক্যারোটিন যা দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে।
* অন্ত্রের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
* গাজরে উপস্থিত ক্যারোটিনয়েড ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। গাজরের সাথে মধু মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বকের মরা কোষ দূর হয় ও ত্বক উজ্জ্বল হয়।
৪। টমেটো :
* টমেটো একটি জনপ্রিয় সবজি। ক্যালরিতে ভরপুর এই সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। আরো রয়েছে ভিটামিন এ, ফাইবার, মিনারেল ও প্রচুর পানি।
* ত্বক ও চুলের রুক্ষভাব দূর করে।
* ঠান্ডাজনিত রোগ ভালো করে।
* যেকোনো চর্মরোগ, বিশেষত স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করে।
* টমেটোতে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা প্রকৃতির ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির বিরুদ্ধে লড়াই করে।
* টমেটোতে লাইকোপিন আছে যা শরীরের মাংস পেশীকে মজবুত করে, দেহের ক্ষয় রোধ করে, দাঁতের গোড়াকে করে শক্তিশালী।
৫। ব্রোকলি :
ব্রোকলি বা সবুজ ফুলকপি একটি কপিজাতীয় সবজি। শীতকালীন সবজির হিসেবে ব্রোকলি বর্তমানে আমাদের দেশে চাষ করা হচ্ছে এবং জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। ব্রোকলিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ক্যালসিয়াম আছে।
* কোষ্ঠোকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
* রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
* ব্রোকলিতে ক্যালসিয়াম থাকায় এটি হাড়ের গঠনে সাহায্য করে ।
* এতে থাকা ভিটামিন ‘কে’ হৃদরোগজনিত সমস্যা প্রতিরোধ করে।
* আয়রন সমৃদ্ধ হওয়ায় অ্যানিমিয়া দূর করে।
৬। পালংশাক :
পালংশাক উচ্চমানের পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর একটি শীতকালীন সবজি। পালংশাকে প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিড, ক্যালসিয়াম ও আয়রন আছে। * আর্থ্রাইটিস, অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করে।
* হৃদরোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
* পালংশাকের উপাদান সমূহ ক্যান্সার, বিশেষ করে ত্বকের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এর ক্যারোটিনয়েডস ও শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রস্টেট ক্যান্সার ও ওভারিয়ান ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
৭। মটরশুটি :
শীত মানেই মটরশুটির সমারহ। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে, ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম থাকে। এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিনও পাওয়া যায়।
* ক্যানসার, হৃদরোগের সমস্যা ও শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
৮। মুলা :
মুলা ও এর শাকে রয়েছে ভিটামিন এ – বি – সি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পানি।
* মূলা শাকের ফাইবার রক্তের শর্করার পরিমান নিয়ন্ত্রণ করে।
* মুলায থাকা ভিটামিন সি আমাদের দেহকে বিভিন্ন রোগ থেকে দূরে রাখে।
* মূলা রুচি বর্ধক একটি সবজি।
* মূলা ফাইবার বা আঁশ সমৃদ্ধ হওয়াতে এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করে।
৯। ধনেপাতা :
ধনে পাতায় রয়েছে ভিটামিন সি – এ, ফলিক এসিড।
* ত্বকে প্রতিদিনের পুষ্টি জোগায়, চুলের ক্ষয়রোধ করে, মুখের ভেতরের নরম অংশ গুলোকে রক্ষা করে।
* ধনে পাতার ভিটামিন ‘এ’ চোখের পুষ্টি জোগায়, রাতকানা রোগ দূর করতে সাহায্য করে।
* ধনেপাতায় উপস্থিত আয়রন রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে।
* ভিটামিন ‘কে’ হাড়ের ভঙ্গুরতা দূর করে। * ধনেপাতা রান্নার চেয়ে কাঁচা খেলে উপকার বেশি পাওয়া যায়। অ্যালঝেইমারস নামে এক ধরনের মস্তিষ্কের রোগ নিরাময়ে ধনে পাতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
* ধনে পাতা শীতকালীন ঠোঁট ফাঁটা, ঠান্ডা লেগে যাওয়া, জ্বর জ্বর ভাব দূর করতে যথেষ্ট অবদান রাখে।
সব ধরনের শাক-সবজিতে থাকে প্রচুর পরিমাণে এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান, যা ত্বকের বার্ধক্যরোধে ভূমিকা রাখে, ত্বকের সজীবতা ধরে রাখে, বিভিন্ন ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। আঁশজাতীয় খাবার শাক-সবজি গ্রহণে শরীরের ওজন বৃদ্ধি কমায়। তবে ফরমালিনমুক্ত সবজি কেনার চেষ্টা করতে হবে। নিজের বারান্দা বা ছাদে ছোট পরিসরে শীতকালীন সবজি লাগাতে পারি।
সুস্থ থাকুন, সুন্দর থাকুন, শীতের সবজি খাওয়া উপভোগ করুন।
তথ্য দাতার নামঃDr. Royena Matin
Thank you for reading!