একজন সফল নারী কৃষি উদ্যোক্তা
বর্তমানে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে বাড়ির ছাদে বাগান করা বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অধিকাংশ বাড়ির ছাদের দিকে তাকালেই বিভিন্ন ধরনের বাগান দেখা যায়। অবশ্য রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরের ছাদে যেসব বাগান দেখা যায় তার অধিকাংশই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। পরিকল্পিতভাবে উদ্যোগ নেয়া হলে বাড়ির ছাদে যেকোন গাছ, এমনকি শাকসবজিও ফলানো সম্ভব। এসব বাগান করে সফলতাও পাচ্ছেন অনেকে। শখ থেকে হয়ে উঠছে বানিজ্যিক চিন্তাধারাও।
একজন শখের ছাদ বাগানি খুলনার পাইকগাছার সফল শিক্ষিকা ললিতা নাথ। তিনি তার নিজ বসতবাড়ির দ্বিতল ভবনের ছাঁদে বিভিন্ন প্রকারের ফল, ঔষধী, সবজি ও ফুলের চাষ করেছেন। তার ছাঁদ বাগান দেখে এলাকার অনেকেই ছাঁদ বাগান করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
শিক্ষিকা ললিতা পাইকগাছা পৌর সদরের মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারি শিক্ষক। স্বামী বিদ্যুৎ রঞ্জন সাহা একজন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। কর্মসূত্রে তিনি বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলায় কর্মরত রয়েছেন।
ললিতা পেশায় একজন শিক্ষক হলেও বাগান করার প্রতি তার আগ্রহ ছোট বেলা থেকেই। ছোট বেলায় বাড়ির আঙ্গিনা কিংবা আশপাশ যেখানে জায়গা পেতো সেখানেই তিনি বিভিন্ন ধরণের গাছের চারা রোপন করতেন। ছোট বেলার শখকে তিনি একটি মডেল হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
গত ৫ বছর আগে পৌর সদরের বাতিখালী এলাকায় ললিতা তার পরিবারকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন। বসবাসের শুরু থেকেই নিজ বসতবাড়ির আঙ্গিনায় কিংবা আশপাশ তেমন ফসলি জায়গা না থাকায় ছাঁদে বাগান করা শুরু করেন। বসতবাড়ির দ্বিতল ভবনের ছাদকে এখন তিনি জীবন্ত বাগানে পরিণত করেছেন। ছাদের কোথাও তিনি লাগিয়েছেন কমলা, মাল্টা, আপেল, কদবেল, বেদানা, লিচু, আমলকি, কাগুজী ও চায়না কাগুজী সহ বিভিন্ন প্রকার ফলের গাছ, কোথাও লাগিয়েছেন পেঁপে, মিষ্টি কুমড়া, করেল্লা, শসা, কাকুড়, কয়েকটি প্রজাতির মরিচ সহ অনেক ধরণের সবজি, আবার কোথাও লাগিয়েছেন দোপাটি, রঙ্গন, জুঁই, হাসনাহেনা, গোলাপ, জবা, গাঁধা, রজনীগন্ধা, নীল অপারজিতা সহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের গাছ।
ছাদের কোন অংশে আবার লাগিয়েছেন পাথর কুঁচি, কাল মেঘা, তুলসী, ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রক গাছ সহ বিভিন্ন ধরণের ঔষধী গাছ। সবজি, ফল আর ফুলে ভরে গেছে ছাঁদের সমস্ত অংশ। দেখে বোঝার উপায় নেই এটি কোন ছাঁদ, নাকি সবুজ ফসলের মাঠ। সব ধরণের সবজি ও ফল কীটনাশক ব্যবহার না করেই এবং জৈবসার ব্যবহার করে উৎপাদন করছেন শিক্ষিকা ললিতা নাথ।
উৎপাদিত সবজি ও ফল নিজের পরিবারের চাহিদা পুরণ করে অতিরিক্ত ফল ও সবজি আত্মীয় স্বজনের মাঝে বন্টন ও বিক্রি করে বাড়তি টাকা আয় করেন বলেও তিনি জানান। ললিতা শিক্ষকতা ও স্কুল পড়ুয়া দুই মেয়ের যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত সময় তিনি বাগান পরিচর্যার কাজে ব্যবহার করেন।
এ ব্যাপারে শিক্ষিকা ললিতা নাথ জানান, ছোট বেলা থেকেই বাগান করা আমার শখ। আমার বাসার সাথে তেমন ফসলি জায়গা না থাকায় ছাঁদে বাগান করা শুরু করি। প্রতিদিন সকাল ৫টার দিকে এবং স্কুল থেকে ফিরে বিকেলে এক দেড় ঘন্টা করে বাগানের পরিচর্যার কাজ করি।
গত ৪/৫ বছরের ব্যবধানে ছাঁদ ছেয়ে গেছে সবজি ও ফল-মূলে। আমার পরিবারের চাহিদা পূরণ করে অনেক সবজি ও ফলমূল অতিরিক্ত থেকে যায়। প্রতিদিন লোকজন যখন আমার বাগান দেখতে আসে তখন একদিকে খুব ভালো লাগে। অপরদিকে নিজেকে মনে হয় ছাদ বাগান করে আমি মনে হয় সফল হয়েছি।
ভবিষ্যতে ছাদে ড্রেনেজ সিষ্টেম ও বাড়ির সামনে বড় পরিসরে বাগান করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে ঐ শিক্ষিকা জানান। ললিতা নাথের ছাঁদ বাগান দেখে এলাকার অনেকেই এ ধরণের বাগান করার আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এএইচএম জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, শিক্ষকতার পাশাপাশি ললিতা নাথের ন্যায় দেশের প্রত্যেক নাগরিকের ছাঁদে বাগান করার মত নানন্দিক পারিবারিক কাজকে গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ। এতে নিজে ও তার পরিবার সহ সমাজ উপকৃত হবে।
ইন্টারনেট থাকে সংগ্রহীত
Thank you for reading!