শীতকালীন সবজির পুষ্টিগুণ
শীতকাল মানেই নানান সবজির সমাহার। শীত এলেই বাঙালির খাবারে তালিকায় যোগ হয় নানা বৈচিত্র্যের শাক – সবজি।এসকল সবজি দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, খেতেও তেমন পুষ্টিকর ও সুস্বাদু হয়ে থাকে। আমাদের শরীরে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, কিংবা ফ্যাটের পাশাপাশি ভিটামিন ও মিনারেলসের ভূমিকা পালন করে থাকে এইসকল শাক – সবজি। তাই শরীরকে কর্মক্ষম ও সতেজ রাখার ক্ষেত্রে নিয়মিত খেতে হবে শাক – সবজি।
তাহলে চলুন কয়েকটা শীতকালীন সবজির পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক –
ফুলকপিঃ
শীতের খুবই সুস্বাদু একটা সবজি হল ফুলকপি। এই ফুলকপিতে রয়েছে প্রয়োজনীয় পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’ ও সি। এছাড়া আরও রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম ও সালফার। ফুলকপিতে আয়রন রয়েছে উচ্চমাত্রায়। আমাদের শরীরে রক্ত তৈরিতে আয়রন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সাধারণত গর্ভবতী মা, বাড়ন্ত শিশু এবং যারা অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করে তাদের জন্য ফুলকপি বেশ উপকারী একটা সবজি। ফুলকপিতে কোনো চর্বির মাত্রা নেই। ফুলকপি পাকস্থলির ক্যান্সার প্রতিরোধে বিশেষ কার্যকরী। ফুলকপিতে থাকা প্রয়োজনীয় পরিমাণে ভিটামিন-এ ও সি শীতকালীন বিভিন্ন রোগ যেমন জ্বর, কাশি, সর্দি ও টনসিল প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। ফুলকপির ভিটামিন ‘এ’ চোখের জন্যও প্রয়োজনীয়।
শিমঃ
শীতকালীন সবজির মধ্যে শিম একটি সুস্বাদু, পুষ্টিকর, আমিষের একটি ভালো উৎস। এটি প্রধানত সবজি হিসেবে এবং এর শুকনো বীজ ডাল হিসেবে খাওয়া হয়। আমরা প্রায় সবাই শিম খেতে পছন্দ করি। শীতকালীন এই শিমের পরিপক্ব বীজে প্রচুর আমিষ ও স্নেহজাতীয় পদার্থ আছে। এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও পানি। শিমের আঁশ-জাতীয় অংশ খাবার পরিপাকে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য অনেকাংশে দূর করে। শিম সাধারণত ডায়রিয়ার প্রকোপ কমায়। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা অনেকাংশে কমায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস করে পাকস্থলি ও প্লিহার শক্তি বাড়ায়।
মুলাঃ
মুলা একটি অন্যতম শীতকালীন সবজি। সাধারণত দুই রকমের মুলা আমাদের দেশে বেশি জন্মায়। সাদা মুলা ও লাল মুলা। মুলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। সব থেকে মজার কথা হল, এই মুলার পাতায় ‘এ’ ভিটামিনের পরিমাণ প্রায় ছয়গুণ বেশি। মুলাতে পাওয়া যায় বিটা ক্যারোটিন। এই সবজিটির রয়েছে প্রচুর পুষ্টি ও ওষুধি গুণ। মুলা আমাদের শরীরের বিভিন্ন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। মুলাতে থাকা বিটা-ক্যারোটিন হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস করে। এটি আমাদের শরীরের ওজন হ্রাস করে। মুলা আলসার ও বদহজম দূর করতে সাহায্য করে। কিডনি ও পিত্তথলিতে পাথর তৈরি প্রতিরোধ করে। শুধু মুলা নয় মুলার শাক অনেক উপকারি এবং এটি অনেক পুষ্টিগুণে ভরপুর।
বাঁধাকপিঃ
শীতকালীন সবজির মধ্যে বাঁধাকপি একটি সুস্বাদু সবজি। বাঁধাকপি সালাত, ভাজি, তরকারি বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। বাঁধাকপিতে শর্করা, ভিটামিন, মিনারেল, এমাইনএসিড এবং প্রচুর পানি আছে। বাঁধাকপিতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি ও ই। এতে থাকা ভিটামিন সি আমাদের শরীরের হাড়কে শক্ত ও মজবুত রাখে। বয়সজনিত হাড়ের সমস্যা থেকে অনেকাংশে রক্ষা করে থাকে বাঁধাকপি। ওজন কমাতেও সহায়ক খাবার বাঁধাকপি। বাঁধাকপিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার আছে। দুরারোগ্য ব্যাধি আলসার প্রতিরোধ করতে সক্ষম। আমাদের শরীরের পাকস্থলির আলসার ও পেপটিক আলসার প্রতিরোধে বাঁধাকপির জুড়ি নেই।
গাজরঃ
গাজর অত্যন্ত পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও খাদ্য আঁশসমৃদ্ধ শীতকালীন সবজি, যা এখন প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। তরকারি বা সালাদ হিসেবে এই সবজি খাওয়া যায়। গাজরে আছে বিটা ক্যারোটিন যা দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। অন্যান্য উপাদান গুলো অন্ত্রের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। গাজরে উপস্থিত ক্যারোটিনয়েড ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। ত্বকের খসখসে ও রোদে পোড়া ভাব দূর করে। গাজরের সাথে মধু মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বকের মরা কোষ দূর হয় ও ত্বক উজ্জ্বল হয়।
টমেটোঃ
টমেটো একটি জনপ্রিয় সবজি। ক্যালরিতে ভরপুর এই সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি। কাঁচা ও পাকা — এই দুই অবস্থাতে টমেটো খাওয়া যায়। টমেটোতে উপস্থিত ভিটামিন-সি ত্বক ও চুলের রুক্ষভাব দূর করে, ঠান্ডাজনিত রোগ ভালো করে। যেকোনো চর্মরোগ, বিশেষত স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করে। টমেটোতে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা প্রকৃতির ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির বিরুদ্ধে লড়াই করে। টমেটোতে লাইকোপিন আছে যা শরীরের মাংস পেশিকে করে মজবুত, দেহের ক্ষয় রোধ করে, দাঁতের গোড়াকে করে আরও শক্তিশালী, চোখের পুষ্টি জোগায়।
Thank you for reading!