ময়মনসিংহের মন্ডার নাম মুখে নিলেই চলে আসে জীভে জল। এখানকার মণ্ডার সুখ্যাতি শোনেননি, এমন মানুষ বোধ হয় কম পাওয়া যাবে। আর এই মানুষেরা মণ্ডার নাম শুনে দেরি করেন না। কিনে নেন সুস্বাদু এই মিষ্টি। সেটা হোক ঢাকা, ময়মনসিংহ কিংবা বাংলাদেশের অন্য কোনো শহরের দোকান। কিন্তু তাঁরা কি আসল মণ্ডা কেনেন।  তো মণ্ডার জন্য এখানে একটা দোকানের কথাই সবাই বললেন। সেটা হলো ‘গোপাল পালের প্রসিদ্ধ মণ্ডার দোকান’।
রবীন্দ্রনাথ পাল জানালেন, মুক্তাগাছার মণ্ডার আবিষ্কারক তাঁর পূর্বপুরুষ গোপাল পাল। তিনি ১৮২৪ সালে দোকানটি প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর কেটে গেছে প্রায় ২০০ বছর। মণ্ডা তৈরির ব্যবসা চলছে বংশানুক্রমে। এক পুরুষ থেকে আরেক পুরুষে। সে হিসাবে এখন পঞ্চম পুরুষের ব্যবসা চলছে। তিনি স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন, ‘মণ্ডা তৈরির মূল রেসিপিটা আমাদের পারিবারিক। গোপনীয় এই কৌশলটা শুধু আমরাই জানি। ফলে মণ্ডার নামে এখানে-সেখানে যা বিক্রি হয়, তা কোনোভাবেই আসল না। ময়মনসিংহ, ঢাকাসহ দেশের কোথাও আমাদের কোনো শাখা, এজেন্ট, শোরুম, বিক্রয়কেন্দ্র বা বিক্রয় প্রতিনিধি নেই। আসল মণ্ডার স্বাদ পেতে হলে মুক্তাগাছায় আমাদের এই দোকানে আসতে হবে।’

মণ্ডার সঙ্গে বৃহৎ কোনো গোষ্ঠী নয়, বরং একটি পরিবারের কৃতিত্ব জড়িয়ে রয়েছে—এটি নিশ্চিত হওয়ার পর মণ্ডা নিয়ে আরও জানতে চাইলাম। রবীন্দ্রনাথ পাল তখন ছোট্ট একটি পুস্তিকা হাতে ধরিয়ে দিলেন। মণ্ডা বিষয়ে সেখানে লেখা আছে—মণ্ডা এক প্রকারের সন্দেশ। শুধু ছানা ও চিনি দিয়ে এটি বানানো হয়। তবে স্বাদের রহস্যটা ‘পাকের’ মধ্যে লুকিয়ে আছে, যা বছরের পর বছর ধরে গোপন রেখেছেন গোপাল পালের বংশধরেরা।
মণ্ডা তৈরির পদ্ধতিটি গোপাল পাল স্বপ্নে পেয়েছিলেন—এমন একটি দাবি আছে পুস্তিকাটিতে। তবে মণ্ডার প্রসারের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন মুক্তাগাছার জমিদারেরা। গোপাল পাল তাঁর উদ্ভাবিত মণ্ডা প্রথমে খাওয়ান মুক্তাগাছার জমিদার সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরীকে। এর স্বাদ তাঁকে মুগ্ধ করে। এরপর এটি জমিদারবাড়ির দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় জায়গা করে নেয়। শুধু তা-ই নয়, জমিদারবাড়ির অতিথিদের মণ্ডা দিয়ে আপ্যায়ন করা নিয়মিত ঘটনা ছিল। আবার জমিদারেরা উপহার হিসেবে বিশিষ্টজনদের কাছে মণ্ডা পাঠাতেন। এভাবেই মুক্তাগাছার ছোট্ট গণ্ডি পার হয়ে মণ্ডার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, সংবিধানপ্রণেতা ড. কামাল হোসেনের মতো রাজনীতিকদের পাশাপাশি চলচ্চিত্র জগতের রাজ্জাক, আনোয়ার হোসেন, সোহেল রানা, বুলবুল আহমেদ, কবরী, শাবানা, ববিতাসহ আরও অনেকে এই দোকানে বসে মণ্ডা খেয়ে সুনাম করেছেন।মণ্ডা খেয়ে যখন ফিরছিলাম, তখন এই ভেবে আনন্দ হলো—যাক, জীবনে প্রথমবারের মতো প্রকৃত স্বাদের এতো মজাদার মণ্ডা খেলাম! আবার মনটা একটু খারাপও হলো। এত দিন মণ্ডার নামে যা খেয়েছি, অন্যরা যা খাচ্ছে, সবই ভেজাল—এটা ভেবে। অথচ এটা দেখার বা ঠেকানোর যেন কেউ নেই।ময়মনসিংহের মন্ডার কনো তুলুনা হয়না,এটা আমাদের দেশে অন্নতম একটা মিস্টি ভান্ডার হয়ে পরিচিতো থাকবে।

(Visited 40 times, 1 visits today)

Thank you for reading!

ময়মনসিংহের মন্ডার নাম মুখে নিলেই চলে আসে জীভে জল। এখানকার মণ্ডার সুখ্যাতি শোনেননি, এমন মানুষ বোধ হয় কম পাওয়া যাবে। আর এই মানুষেরা মণ্ডার নাম শুনে দেরি করেন না। কিনে নেন সুস্বাদু এই মিষ্টি। সেটা হোক ঢাকা, ময়মনসিংহ কিংবা বাংলাদেশের অন্য কোনো শহরের দোকান। কিন্তু তাঁরা কি আসল মণ্ডা কেনেন।  তো মণ্ডার জন্য এখানে একটা দোকানের কথাই সবাই বললেন। সেটা হলো ‘গোপাল পালের প্রসিদ্ধ মণ্ডার দোকান’।
রবীন্দ্রনাথ পাল জানালেন, মুক্তাগাছার মণ্ডার আবিষ্কারক তাঁর পূর্বপুরুষ গোপাল পাল। তিনি ১৮২৪ সালে দোকানটি প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর কেটে গেছে প্রায় ২০০ বছর। মণ্ডা তৈরির ব্যবসা চলছে বংশানুক্রমে। এক পুরুষ থেকে আরেক পুরুষে। সে হিসাবে এখন পঞ্চম পুরুষের ব্যবসা চলছে। তিনি স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন, ‘মণ্ডা তৈরির মূল রেসিপিটা আমাদের পারিবারিক। গোপনীয় এই কৌশলটা শুধু আমরাই জানি। ফলে মণ্ডার নামে এখানে-সেখানে যা বিক্রি হয়, তা কোনোভাবেই আসল না। ময়মনসিংহ, ঢাকাসহ দেশের কোথাও আমাদের কোনো শাখা, এজেন্ট, শোরুম, বিক্রয়কেন্দ্র বা বিক্রয় প্রতিনিধি নেই। আসল মণ্ডার স্বাদ পেতে হলে মুক্তাগাছায় আমাদের এই দোকানে আসতে হবে।’

মণ্ডার সঙ্গে বৃহৎ কোনো গোষ্ঠী নয়, বরং একটি পরিবারের কৃতিত্ব জড়িয়ে রয়েছে—এটি নিশ্চিত হওয়ার পর মণ্ডা নিয়ে আরও জানতে চাইলাম। রবীন্দ্রনাথ পাল তখন ছোট্ট একটি পুস্তিকা হাতে ধরিয়ে দিলেন। মণ্ডা বিষয়ে সেখানে লেখা আছে—মণ্ডা এক প্রকারের সন্দেশ। শুধু ছানা ও চিনি দিয়ে এটি বানানো হয়। তবে স্বাদের রহস্যটা ‘পাকের’ মধ্যে লুকিয়ে আছে, যা বছরের পর বছর ধরে গোপন রেখেছেন গোপাল পালের বংশধরেরা।
মণ্ডা তৈরির পদ্ধতিটি গোপাল পাল স্বপ্নে পেয়েছিলেন—এমন একটি দাবি আছে পুস্তিকাটিতে। তবে মণ্ডার প্রসারের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন মুক্তাগাছার জমিদারেরা। গোপাল পাল তাঁর উদ্ভাবিত মণ্ডা প্রথমে খাওয়ান মুক্তাগাছার জমিদার সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরীকে। এর স্বাদ তাঁকে মুগ্ধ করে। এরপর এটি জমিদারবাড়ির দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় জায়গা করে নেয়। শুধু তা-ই নয়, জমিদারবাড়ির অতিথিদের মণ্ডা দিয়ে আপ্যায়ন করা নিয়মিত ঘটনা ছিল। আবার জমিদারেরা উপহার হিসেবে বিশিষ্টজনদের কাছে মণ্ডা পাঠাতেন। এভাবেই মুক্তাগাছার ছোট্ট গণ্ডি পার হয়ে মণ্ডার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, সংবিধানপ্রণেতা ড. কামাল হোসেনের মতো রাজনীতিকদের পাশাপাশি চলচ্চিত্র জগতের রাজ্জাক, আনোয়ার হোসেন, সোহেল রানা, বুলবুল আহমেদ, কবরী, শাবানা, ববিতাসহ আরও অনেকে এই দোকানে বসে মণ্ডা খেয়ে সুনাম করেছেন।মণ্ডা খেয়ে যখন ফিরছিলাম, তখন এই ভেবে আনন্দ হলো—যাক, জীবনে প্রথমবারের মতো প্রকৃত স্বাদের এতো মজাদার মণ্ডা খেলাম! আবার মনটা একটু খারাপও হলো। এত দিন মণ্ডার নামে যা খেয়েছি, অন্যরা যা খাচ্ছে, সবই ভেজাল—এটা ভেবে। অথচ এটা দেখার বা ঠেকানোর যেন কেউ নেই।ময়মনসিংহের মন্ডার কনো তুলুনা হয়না,এটা আমাদের দেশে অন্নতম একটা মিস্টি ভান্ডার হয়ে পরিচিতো থাকবে।

(Visited 40 times, 1 visits today)

Thank you for reading!