মাটির চুলায় রান্না

আমাদের মধ্যে যাদের শৈশব, কৈশোরের জীবনটা কেটেছে গ্রামে, আমরা যারা গ্রামের বড় বড় অনুষ্ঠান দেখেছি খেয়েছি তারা জানি যে গ্রামের রান্নাটা হয় এখনও মাটির চুলায় বা উনুনে। মাটির চুলায় সুস্বাদু রান্না আমাদের ঐতিহ্যগত বিজ্ঞান।
মাটির তৈরি চুলার কথা মনে করলেই, মনে পড়ে যায় আমাদের শৈশবের কথা। দাদি-নানি ও মায়ের হাতের রান্নার কথা। তাদের সেই রান্নার স্বাদ যেন জিভে এখনও পানি এনে দেয়। গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ মাটির চুলায় রান্না করে। কিন্তু বর্তমানে কমে আসছে এই মাটির চুলার ব্যবহার।
গ্রামের কিছু কিছু অঞ্চলে এই চুলার ব্যবহার দেখা গেলেও শহরাঞ্চলে এ চুলার দেখা মেলে না বলেলেই চলে। আবার অনেকে বাণিজ্যিকভাবেও মাটির চুলা তৈরি করে থাকে।
আগের দিনে আমাদের রান্নাবান্নার মূল ভিত্তি ছিলো মাটির চুলা এবং মাটির হাঁড়ি-পাতিল, থালাবাসন। রান্না ও খাবারের থালাবাসন প্রায় সবকিছু তৈরি হতো মাটি দিয়ে। মানবজাতির গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারগুলোর অন্যতম আবিষ্কার হলো চুলা আবিষ্কার।
প্রাচীন মানুষের কাঠ ও খড়কুটো জ্বালিয়ে তাতে খাবার পুড়িয়ে খাওয়ার যে ঐতিহাসিক গল্পটি আমরা জানি, চুলা আবিষ্কারের পর মানুষ তার থেকে এক ধাপ এগিয়ে যায়। প্রথম চুলার আবিষ্কারের পর শত শত বছরের অনুশীলন মানুষকে আজকের চুলা বানাতে সহায়তা করেছে।
গ্রামের সকল সহজলভ্য উপাদান যেমন কাঠ, বাঁশ, খড়কুটো, পাটকাঠি, শুকনো পাতা—এসবই মাটির চুলার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আর আমরা সকলে জানি যে মাটির চুলায় রান্না করা খাবারও হয় অনেক সুস্বাদু। কারণ এই মাটির চুলায় রান্না করা খাবারে থাকে এক অন্যরকম মনোমুগ্ধকর ঘ্রাণ।
কিন্তু এই মাটির চুলায় রান্না করা এতটা সহজ নয়। এক সময় গ্রামের গৃহিণীরা রান্নার কাজ অনেক কষ্টের মনে করতেন। রান্নার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ জ্বালানি সংগ্রহ করা নিয়ে সব সময় হতাশায় থাকতে হতো তাদের। সংসার সামলানো সাথে বাচ্চাদের লেখাপড়া করানো, বড় করে তোলা সব মিলিয়ে সব দিকে সুদৃষ্টি রাখা তাদের পক্ষে কষ্টকর ছিলো। রান্নার কাজকে তারা অনেক বড় ও কষ্টসাধ্য মনে করতেন।
কিন্তু বর্তমানে তা রোধ হচ্ছে। প্রযুক্তির সাথে সাথে সব কিছু আস্তে আস্তে পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। এখন আর আগেরমত গরুর গোবর দিয়ে জ্বালানি ব্যবহার, বাঁশ, গাছের টুকরা, শুকনো পাতাসহ ইত্যাদি জ্বালানি সংগ্রহের জন্য হতাশায় ভুগতে হচ্ছে না। তারা এখন রান্নার কাজে চুলার সাহায্যে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কোম্পানির সিলিন্ডার ব্যবহার করছেন। প্রতিমাসে নগদ টাকা দিয়ে সিলিন্ডারেরর সাহায্যে গৃহিণীরা রান্নার কাজ করছেন। প্রযুক্তির সাথে সাথে গ্রামীণ মানুষেরা রান্নার কাজকে সহজ করে তুলেছেন।
সর্বশেষে বলা যায়, প্রযুক্তি যতই উন্নত হোক না কেনো মাটির চুলায় রান্না আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্যের একটি অংশ। এখনো শহরাঞ্চলের মানুষরা গ্রামে গেলে তারা মাটির চুলায় খাওয়ার বায়না করে। কারণ মাটির চুলায় রান্নার ঘ্রাণ শহরাঞ্চলের মানুষেরা শহরে পায় না। মাটির চুলায় রান্নার যেই স্বাদ সেই স্বাদ সিলিন্ডার কিংবা গ্যাসের চুলায় নেই। তাই এখনো মাটির চুলায় রান্না আমাদের ঐতিহ্যর সাথে মিশে আছে।
Thank you for reading!