নওগাঁর গরিবের হোটেল, টাকা ছাড়াই মিলে খাবার।
নওগাঁর গরিবের হোটেল, টাকা ছাড়াই মিলে খাবার।

নওঁগা শহরের কোট চত্বরের সামনে “হাজী নজিপুর হোটেল আ্যন্ড৷ বিরিয়ানি হাউজ” ইতোমধ্যে হোটেলটি নওগাঁবাসীর কাছে গরীবের হোটেল নামে পরিচিতি পেয়েছে।
প্রতি বৃহস্পতিবার দুপুর হলেই নানা জায়গা থেকে এই হোটেলে এসে বসে পরেন ছিন্নমূল মানুষ। একবেলা ভালো পরিবেশে, ভালো খাবার খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে তারা।দোয়া করে দু’হাত তুলে হোটেল মালিক এর জন্য।
হোটেল মালিক আলহাজ আলী আজগর হোসেন বলেন,কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে না,নিজের অতীত কষ্টের কথা ভেবে আর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমার এমন উদ্যোগ, যতোদিন বেঁচে থাকবো ততোদিনই এমন কাজ করে যেতে চাই আমি।আলহাজ আলী আজগর হোসেনের এমন উদ্যোগ প্রশংসা কুড়িয়েছে সব মহলে। প্রতি বৃহস্পতিবার দুপুরে শতাধিক দরিদ্র, অসহায় খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ চেয়ার টেবিলে বসে অতিথিদের মতো একবেলা বিনামূল্যে তৃপ্তিসহকারে বিনামূল্যে খাবার খান।
হোটেল খাবার মেন্যুতে থাকে ডিম, মাছ,মাংস,ডাল ও সবজি।দেখে মনে হবে,কোনা আনন্দঘন অনুষ্ঠান। খাবারের জন্য নেই কোনো হুড়োহুড়ি বা কাড়াকাড়ি।
যে যখন আসছেন বসে পরছেন খাবারের সারিতে। এভাবেই প্রতি বৃহস্পতিবার চলে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। যাদের ভাগ্যে তিনবেলা ঠিক মতো খাবার জোটে না তারা এমন ভালো খাবার খেয়ে বেজায় খুশি।তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেন ছিন্নমূল মানুষেরা।
খাবার খেতে আসা আলেয়া বেগম বলেন ‘আমরা গরীব মানুষ। ভিক্ষাবৃত্তি করে চলে জীবন। আমাদের ভাগ্যে জোটে না ঠিক মতো খাবার।মাছ মাংস তো বছরে একবারও কেনার সামর্থ নাই।আগে বছরে একবার কোরবানির ঈদে মাংস খেতাম।এখন সপ্তাহে একবার কোনদিন মাছ কোনো দিন মাংস দিয়ে পেট ভরে খাবার খাই এই হোটেলে’।এমনই অনেক মানুষ কষ্টের মধ্যে এতটুকু স্বস্তি পায় এই হোটেলে।
হোটেল মালিক আলহাজ্ব আলী আজগর বলেন ‘আমি মানুষের ধিক্কার লাঞ্চনা-বঞ্চনা খেয়ে বেড়ে উঠেছি।আমি শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধী। অভাবের সংসারে পরিবারেও ঠাঁই হয়নি আমার।
১৯৯৭ সালে নিজ জেলা নাটোরে সিংড়া থেকে স্ত্রী ও সন্তানকে সাথে নিয়ে নওগাঁতে বসবাস শুরুকরি।প্রথমে ২৫ টাকা দিন মুজুরিতে কাজ শুরু করি।শারীরিক সমস্যা থাকায় সে কাজটি টিকেনি বেশি দিন।অর্থের অভাবে নিজের রক্ত বিক্রি করে সন্তানের মুখে খাবার দিতে হয়েছে।পরে আমি যে বাসায় ভাড়া থাকতাম তার সুপারিশ এ আবারও হোটেলে থালা বাসন ধোয়া মোছার কাজ পাই।এরপর হোটেল মালিক ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়ায় হোটেল ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।হোটেল মালিকের সকল ঋণ মাথায় নিয়ে এবং তাকে সাথে নিয়ে আমি নিজেই শুরু করি হোটেল ব্যবসা।২কেজি,৫ কেজি গরুর মাংস এনে রান্না করে বিক্রি শুরু করি এখন আমার হোটেল এ ৩৫ জন কর্মচারী কাজ করে।মাঝে হজ্জ্ব করেছি।শহরে বাসা বাড়ি করেছি।দুই মেয়ে ও এক ছেলে পড়াশোনা করছে।
তিনি আরও বলেন,’নিয়ত করেছিলাম কখনো যদি অভাব থেকে মুক্ত হতে পারি তাহলে গরীব অসহায় মানুষকে খাওয়াবো।আর সেই ইচ্ছা থেকেই সাধ্যের মধ্যে গত ১ যুগ ধরে গরিব মানুষদের একবেলা খাইয়ে আসছি।কারণ অভাব কি আমি বুঝি সপ্তাহে প্রতি বৃহস্পতিবার গরীব অসহায় মানুষকে খাওয়ানোর পাশাপাশি অন্যান্য দিনেও যদি কোনো অসহায় গরীব মানুষ খেতে আসে আমি তাদের খাওয়াই।কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে না,নিজের অতীত কষ্টের কথা ভেবে আর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমার এমন উদ্যোগ। ‘
হোটেল কর্মচারী সোহেল বলেন,’মালিক আমাদের বলেছেন আমরা যেনো সবসময় ক্ষুধার্ত অসহায় মানুষ এর খাবার আগে দেই।আর উনি আমাদের কখনো কর্মচারী হিসেবে মানুষের কাছে পরিচয় করান না।তিনি বলে আমরা উনার পার্টনার। আলহাজ্ব আলী আজগর হোসেন এর কাজ নিঃসন্দেহে একটি মহৎ কাজ।সমাজের অনেক ধনী রয়েছে কিন্তু এমন মহৎ কাজ বিরল।
সূত্রঃ ইন্টারনেট।
Thank you for reading!